তালাক ও ডিভোর্সের শরয়ী বিধান
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা। এর অন্যতম সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-
ইসলাম মানুষের স্বভাব ও চাহিদাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে না; বরং তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ইসলাম অন্যান্য বিধানের মত তালাকের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ পথ অবলম্বন করেছে। একদিকে যেমন বৈধ পন্থায় স্বভাবজাত চাহিদা পূরণ করার ব্যবস্থা হিসেবে বিবাহের বিধান রেখেছে, অন্যদিকে এই চাহিদা পূরণের অবৈধ পন্থা ব্যভিচারকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। কখনো কখনো সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর আন্তরিক সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হওয়াটাও বিচিত্র কিছু নয়, তাই বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল রাখার উপর যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করলেও একান্ত প্রয়োজনে রেখেছে তালাকের বিধান।
ইসলামে তালাকের অবস্থান:
যেহেতু নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্কের উপর গোটা মানবজাতির অস্তিত্ব নির্ভরশীল, তাই
সম্ভাব্য যে কোনো উপায়ে এমনকি প্রয়োজনে ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও ইসলাম স্বামী-
স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ক ও পারিবারিক বন্ধন রক্ষা করতে উৎসাহ দিয়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কথার
কারণে এ বন্ধন ছিন্ন হওয়া ইসলামে কখনো কাম্য নয়। কিন্তু অনেক সময় অবস্থা এমন গুরুতর আকার ধারণ করে যে, বিবাহ বহাল রাখার কোনো উপায় থাকে না। বরং উভয়ের জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিসহ, তিক্ত ও বিষাক্ত। তখন বাস্তবতার অনিবার্য প্রয়োজনে ইসলাম বিবাহ বিচ্ছেদ তথা তালাকের অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং তালাকের বিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ইসলাম কারো উপর জুলুম করেনি বরং মানবিক অধিকার সুনিশ্চিত করেছে।
তালাকের অধিকার কার ও কেন?
নারী-পুরুষ উভয়কে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। উভয়ের বিবেক, বুদ্ধি ও যোগ্যতা সম্বন্ধে একমাত্র তিনিই পূর্ণরূপে অবগত। তিনি উভয়ের মধ্যে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দিয়েছেন স্বামীকে; স্ত্রীকে নয়। আর এর পেছনে অবশ্যই রয়েছে হিকমত বা গূঢ়রহস্য, তা মানুষের বোধগম্য নাও হতে পারে। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, 'নারীজাতি সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল মেধা
সম্পন্ন'। এছাড়া আবেগ তাড়িত হওয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী স্বভাবগত দুর্বল। তাই ঝুঁকিপূর্ণ
কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার তার উপর ছেড়ে না দেয়াই যুক্তিযুক্ত।
আল্লামা শামী রাহ. বলেন-
قال في الفتح: ومنها أي من محاسنه جعله بيد الرجال دون النساء، لا ختصـاصـهن بنقصان العقل،
“দ্বীন ও বিবেক বুদ্ধির অসম্পূর্ণতা ও কুপ্রবৃত্তির আধিক্যের কারণে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা অর্পণ না করে স্বামীর হাতে অর্পণ করা শ্রেয় ও অধিক যুক্তিযুক্ত। "
অধিকন্তু কুরআন পাকে তালাকের বিধান সম্বলিত আয়াতসমূহে তালাকের সম্বোধন স্বামীর দিকে করা হয়েছে; স্ত্রীর দিকে নয়।
ইরশাদ হচ্ছে-
وإن عزموا الطلاق فإن الله سميع عليم (۲۲۷)
“আর যদি তারা (পুরুষেরা) তালাক দেয়ার সংকল্প করে তবে আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وإذا طلقتم النساء فبلغن أجلهن فأمسكوهن بمعروف أو سرحوهن بمعروف
“যখন তোমরা স্ত্রীকে তালাক দাও এবং তারা ‘ইদ্দত' পূর্তির নিকটবর্তী হয় তখন তোমরা
হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে দিবে অথবা বিধিমত মুক্ত করে দেবে। "
উক্ত আয়াতদ্বয়সহ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তালাক প্রদানের ক্ষমতার বিষয়ে শুধুমাত্র
পুরুষকে সম্বোধন করা হয়েছে। স্ত্রী বা অন্য কারো দিকে করা হয়নি। তাই স্ত্রী বা কোনো শ্রেণীর তালাক দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তালাক দেয়ার ক্ষমতা বা অধিকার একমাত্র স্বামীর।
তালাকপূর্ব করণীয় ও তালাক দেয়ার পদ্ধতিঃ
তালাক প্রদানের পদ্ধতিতে ইসলাম অত্যন্ত সতর্কতামূলক মানবিক পন্থা অবলম্বন করেছে
এবং পুরো প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয়ের এবং পুনরায় দাম্পত্য সম্পর্কে ফিরে
আসার সুযোগ রেখেছে।
কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
والتي تخافون شورهت فعظوهري واهجروهن في المضاجع واضربوهن فإن أطعنكم فلا
تبغوا عليهن سبيلا إن الله كان عليا كبيرا (30) وإن خفتم شقاق بينهما فأبعثوا حكما
من أهله، وحكما من أهلها إن يريدا إصلاحا يوفق الله بينهما إن الله كان عليما خبيرا )
**
‘তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন করো এবং তাদেরকে প্রহার করো (যা সীমাতিরিক্ত হবে না)। যদি এতে তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান, শ্রেষ্ঠ। আর তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা স্বামীর পরিবার হতে একজন ও স্ত্রীর পরিবার হতে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।
উক্ত আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে, একান্ত প্রয়োজনে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের পূর্বে চারটি স্তর অবলম্বন করবে। প্রথম পর্যায়ে নম্রভাবে তাকে বুঝানো বা নসীহত করা, এতে যদি স্ত্রী সংশোধন না হয়, তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে তার বিছানা পৃথক করে দেয়া। যেন সে স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। যদি এতেও সংশোধন না হয়, তাহলে তৃতীয় পর্যায়ে তাকে হালকাভাবে প্রহার করা (যাতে শর'য়ী সীমা লঙ্ঘন না হয়।
যেমন, চেহারায় আঘাত না করা, শরীরে দাগ কাটে এমন প্রহার না করা)।
উপরোক্ত পদ্ধতিসমূহের উপর আমল করার পরও যদি সংশোধন না হয়, তাহলে চতুর্থ পর্যায়ে উভয়ের অভিভাবকদের মধ্য হতে নির্ভরযোগ্য দু'জন ব্যক্তিকে সালিশ নিযুক্তের মাধ্যমে তাদের মাঝে সমঝোতার চেষ্টা করা। তবে সেক্ষেত্রে উত্তম হলো, উভয়ের অভিভাবক, একজন করে বিজ্ঞ আলেম বা মুফতী অথবা শর'য়ী মূলনীতি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে বিচারক নির্বাচন করবে, যাঁরা উভয়ের অভিযোগ শোনে ইনসাফের সাথে সমঝোতা করে দেবেন।
(উপরোক্ত সমস্ত পন্থা অকার্যকর হলে শরয়ী নিয়ম মোতাবেক তালাকের পথ অবলম্বন করতে পারবে।) তালাক দেয়ার শরয়ী নিয়ম হলো- 'হায়েয' পরবর্তী সহবাসমুক্ত ‘তুহুরে' (পবিত্রাবস্থায়) প্রথমে এক তালাকে রজয়ী দিবে; এর বেশি নয়। তারপর স্ত্রীর সাথে মেলামেশা না করে তাকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিবে এবং তার অবস্থা লক্ষ্য করতে থাকবে।
যদি স্ত্রী অনুতপ্ত হয়ে পূর্বের ন্যায় সংসার করতে ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে স্বামী-স্ত্রী সূলভ যে কোনো আচরণ (যেমন, আলিঙ্গন বা সহবাস ইত্যাদি) এর মাধ্যমে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে তার সাথে ঘর সংসার করা যাবে। এরপর আর তালাক না দিয়ে রেখে দিবে। আর যদি এক ‘তালাকে রাজয়ী’ দেয়ার পরে ইদ্দতের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সূলভ আচরণ না করে- এভাবে ইদ্দত শেষ হয়ে যায়, তাহলে এমনিতেই 'তালাকে বায়েন' পড়ে যাবে। তখন স্ত্রী চাইলে অন্যত্র বিবাহ বসতে পারবে। আর স্বামীর জন্য নববিবাহের মাধ্যমে উক্ত মহিলাকে গ্রহণ করার
সুযোগ থাকবে। উল্লেখ্য যে, কোনোক্রমেই একত্রে বা ভিন্নভাবে তিন তালাক দেয়া উচিত নয়। কারণ এতে স্ত্রী ‘শর—য়ী হীলা’ ব্যতীত হারাম হয়ে যায়।
নববিবাহের মাধ্যমেও তাকে আর ফিরিয়ে নেয়া যায় না। তখন আফসোস আর পরিতাপের কোনো সীমা থাকে না।
তালাকের প্রকারভেদঃ
প্রদান করার দিক থেকে তালাক তিন ভাগে বিভক্ত। আল্লামা আলী আল মারগীনানী রাহ.
বলেন-
الطلاق على ثلاثة أوجه: حسن وأحسن وبدعي، فالأحسن أن يطلق الرجل امرأته تطليقة واحدة في طهر
لم يجامعها فيه، ويتركها حتى تنقضي عدتها...والحسن هو طلاق السنة وهو أن يطلق المدخول بهاثلاثا في ثلاثة أطهار...وطلاق البدعة أن يطلقها ثلاثا بكلمة واحدة أو ثلاثا في طهر واحد، فإذا فعلذلك وقع الطلاق وكان عاصيا
তালাক তিন প্রকার।
(এক) 'তালাকে আহসান' বা সর্বোত্তম তালাক। এমন ‘তুহুরে' (পবিত্রতায়) এক তালাক দেয়া, যাতে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস হয়নি। এরপর কোনো তালাক না দেয়া যাতে ইদ্দত শেষ হলে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
(দুই) 'তালাকে হাসান'যাকে সুন্নাত তালাকও বলা হয়। তা হলো তিন ‘তুহুরে' আলাদাভাবে তিন তালাক প্রদান করা।
(তিন) ‘তালাকে বিদ'আত’ তথা নাজায়েয তালাক। আর তা হলো- এক সাথে এক বাক্যে তিন তালাক দেয়া (যেমন, 'তোমাকে তিন তালাক দিলাম' বলা)। তেমনি এক ‘তুহুরে' ভিন্ন ভিন্ন শব্দে তিন তালাক দেয়া, কিংবা মাসিক চলাকালীন বা এমন পবিত্রতায় তালাক দেয়া যাতে স্বামী-স্ত্রীর মিলন হয়েছে, এক বা একাধিক তালাক হোক না কেন।
উপরোক্ত সকল প্রকার তালাক প্রদান নাজায়েয হলেও তালাক হয়ে যাবে।
পরিণাম হিসেবে তালাক তিন প্রকারঃ
১.‘তালাকে রাজয়ী' অর্থাৎ এমন তালাক যে তালাকের পর ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ
বহাল থাকে এবং ইদ্দতের ভেতর নতুন করে বিবাহ করা ব্যতীত স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে।
আর ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে সম্পূর্ণরূপে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে পুনরায় নতুন মোহর ধার্য করে উক্ত মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে।
২.'তালাকে বাইন' অর্থাৎ এমন তালাক যার দ্বারা বিয়ে ভেঙ্গে যায় কিন্তু উভয়ে সম্মত হলে মোহর ধার্য করে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়।
৩. ‘তালাকে মুগাল্লাযা’ অর্থাৎ স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়া। যার কারণে স্ত্রী সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যায়। শর—য়ী হালালা ব্যতীত তাকে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা যায় না।
উকিলের মাধ্যমে তালাক প্রদানঃ
স্বামী যদি কাউকে উকিল বানিয়ে বলে যে, আপনি আমার স্ত্রীকে তালাক দিন। তখন সে উকিল হিসেবে যত তালাক দেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়, তার স্ত্রীকে তত তালাক দিতে পারবে।
কিন্তু তালাক দেয়ার পূর্বেই যদি তার ওকালতি বাতিল করে দেয় তখন তার স্ত্রীকে তালাক
দেয়ার অধিকার থাকবে না।
পোস্টকার্ড ও টেলিফোনের মাধ্যমে তালাকঃ
পোষ্টকার্ড ও টেলিফোনের মাধ্যমে তালাক দিলে তালাক হয়ে যাবে। যদি স্ত্রী সম্পূর্ণ নিশ্চিত
হয় যে, এটা স্বামীর চিঠি বা তালাক প্রদানকারী তার স্বামী বা স্বামীর স্বীকারোক্তি ৷
অস্বাভাবিক অবস্থায় তালাকের বিধানঃ
তালাক অধ্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনিবার্য প্রয়োজনে তালাক প্রদানের জন্য শরী'আতের নির্ধারিত পূর্বোক্ত সুন্দর ব্যবস্থা উপেক্ষা করে কেউ যদি রাগের মাথায়, কিংবা হাস্যোচ্ছলে অথবা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তালাক প্রদান করে তাহলে তার কী হুকুম? এ সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা রাহ. ও তাঁর অনুগামী সকল ইমাম ও ফকীহ একমত যে, হেসে কেঁদে, নরমে-গরমে যেভাবেই তালাক দেবে তা কার্যকর হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে, মানুষ সাধারণত রাগের বশেই তালাক দিয়ে থাকে। তাই রাগ থাকাটা তালাক হওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধক নয়। কিন্তু রাগ হলে মানুষের কখনো এমন অবস্থা হয় যে, সে বোধ, বুদ্ধি ও জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে সে এমন কিছু আচরণ ও উচ্চারণ করে থাকে যা একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করতে পারে না। আর এ জ্ঞানশূন্য অবস্থায় যদি সে তালাক দেয় এবং শর—য়ী সাক্ষ্য বা তালাকদাতার কসম করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তালাক দেয়া অবস্থায় তার হুশ ছিলো না, তাহলে তালাক পতিত হবে না। আর যদি শর—য়ী সাক্ষ্য বা নিজের কসমের মাধ্যমে তালাক দেয়ার সময় এ অবস্থা প্রমাণিত না হয়, তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে। তার রাগ যতই থাকুক না কেন তা বিবেচ্য নয়।
মুফতী শফী রাহ. মা'আরেফুল কুরআনে বলেন- 'কর্মের পাপ হওয়া কর্মের প্রতিক্রিয়াকে রহিত করতে পারে না, অন্যায় অস্ত্রাঘাত যেমন প্রাণ সংহার করে তেমনি বৈধ পন্থায় ও অবৈধ পন্থায় তালাক প্রদান অনিবার্য বিচ্ছেদ সৃষ্টি করবে।
তাছাড়া বিবাহ ও তালাক এমনই স্পর্শকাতর বিষয় যে, তাতে ‘ইচ্ছা' বিবেচ্য নয়, উচ্চারণই বিবেচ্য। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, বিবাহ, তালাক ও গোলাম আযাদ- এই তিনের অর্থপূর্ণ উচ্চারণও অর্থপূর্ণ এবং পরিহাসপূর্ণ উচ্চারণও অর্থপূর্ণ। পরিণাম ও পরিণতি বিবেচনা না করে তালাকের মত অতি স্পর্শকাতর বিষয়কে যারা ছেলেখেলায় পরিণত করে তাদের জন্য এটা হলো শরী'আত প্রদত্ত একটি কঠিন মানসিক শাস্তি। তেমনিভাবে একজন নিরীহ
নির্যাতিতা স্ত্রীর অসৎ অত্যাচারী স্বামী থেকে রক্ষা পাওয়ার মাধ্যমও বটে।
জোরপূর্বক তালাক প্রদানঃ
যদি কাউকে জোরপূর্বক তালাক প্রদানে বাধ্য করা হয়, আর সে বাধ্য হয়ে মৌখিকভাবে তালাক দেয়, তাহলে তার তালাক পতিত হবে। কেননা সে জোর প্রয়োগের সময় দু'টি অপ্রত্যাশিত কাজের সম্মুখীন হয়েছে।
১. নিজের জীবন বিপন্ন করা।
২. স্ত্রীকে তালাক দেয়া।
তালাক প্রদানের মাধ্যমে সে অপেক্ষাকৃত সহজ বিষয়টি একপ্রকার স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে। সুতরাং তা তার পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় তালাক হিসাবে গণ্য হয়ে তালাক পতিত হয়ে যাবে!
ইমাম ইবনুল হুমাম রাহ. বলেন-
وكذلك المكره مختار في التكلم اختيارا كاملا في السبب إلا أنه غير راض بالحكم لأنه عرف الشـرين
فاختار أهونهما عليه.
“এমনিভাবে ‘মুকরাহ' ব্যক্তি (অর্থাৎ যাকে তালাক দিতে বাধ্য করা হয়েছে) অনিচ্ছা সত্ত্বেও
তালাক শব্দ উচ্চারণ করার ব্যাপারে পূর্ণ ইখতিয়ার রাখে, তাই তার তালাক পতিত হবে।
কেননা সে জোর প্রয়োগের সময় দু'টি অপ্রত্যাশিত কাজের সম্মুখীন হয়েছে।
(১. নিজের জীবন বিপন্ন করা। ২. স্ত্রীকে তালাক দেয়া)। অতঃপর সে তালাক প্রদানের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত সহজ বিষয়টি এক প্রকারের স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে।” আর যদি মৌখিক উচ্চারণ ছাড়া জোরপূর্বক স্বাক্ষর করানো হয়, তাহলে তা প্রযোজ্য হবেনা ।
আল্লামা শামী রাহ. বলেন-
فلو أكره على أن يكتب طلاق امرأته فكتب لا تطلق، لأن الكتابة أقيمت مقام العبارة باعتبار الحاجة
ولاحاجة هنا.
“যদি কাউকে তালাকনামা লেখার জন্য বাধ্য করার কারণে সে তালাকনামা লিখে দেয়,
তাহলে তার স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হবে না। কেননা, প্রয়োজনের কারণে লেখা কথার স্থলবর্তী
হয়। আর এখানে এ জাতীয় কোনো প্রয়োজন নেই।
স্ত্রীর তালাক গ্রহণ প্রসঙ্গঃ
শরী‘আত তালাকের অধিকার স্বামীকে প্রদান করলেও স্ত্রীর উপর জুলুম করেনি, বরং তার আত্মরক্ষার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করেছে। যেমন-
প্রথমত বিবাহের আক্দের সময় তাকে স্বামী থেকে শর্ত করে তালাক গ্রহণের অধিকার দিয়েছে। শরী'আতের পরিভাষায় যাকে ‘তাফবীযে তালাক’ বলে।
দ্বিতীয়ত বিবাহের পরে অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে তালাক গ্রহণের সুযোগ দিয়েছে।
শরী'আতের পরিভাষায় যাকে ‘খোলাতালাক' বলে। সুতরাং এ দাবির কোনো সুযোগ নেই যে, শরী'আত তালাকের ক্ষমতা একমাত্র স্বামীকে অর্পণ করে জুলুম করেছে।
খোলা তালাকের নিয়মঃ
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হলে এবং স্বামীও তালাক না দিলে স্ত্রীর জন্য স্বামীকে একথা
বলা জায়েয আছে যে, আমার নিকট থেকে কিছু টাকা নিয়ে বা আমার মোহরের পাওনা টাকার বিনিময়ে আমাকে মুক্ত করে দাও। জবাবে স্বামী যদি বলে আচ্ছা, তোমাকে ছেড়ে দিলাম । তাহলে এরূপ উক্তিতে স্ত্রীর উপর এক ‘তালাকে বায়েন’ পতিত হবে। তখন স্বামীর জন্য স্ত্রীকে নতুন সূত্রে বিবাহ ব্যতীত ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকবে না। (অবশ্য যদি ঐ মজলিসে কিছু না বলে স্বামী উঠে চলে যায় অথবা স্বামী কিছু বলার পূর্বেই স্ত্রী উঠে চলে যায়, তারপর স্বামী বলে, আচ্ছা তোমাকে ছেড়ে দিলাম, এতে খোলা হবে না, কথোপকথন এক জায়গায় হতে হবে) যেহেতু শর্ত হলো পূর্ণ। এ উপায়ে স্ত্রী নিজেকে মুক্ত করাকে ‘খোলা
তালাক' বলে।
কাবিননামায় ‘তাফবীযে তালাক’ প্রসঙ্গঃ
স্বামী প্রদত্ত অধিকারকে বলে স্ত্রীকে নিজের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে এ অধিকার প্রদান করাকে শরয়ী পরিভাষায় 'তাফবীযে তালাক' বলে। বিবাহে উভয় পক্ষ পারস্পরিক সম্মতিক্রমে শর্তসাপেক্ষে বা বিনাশর্তে উক্ত চুক্তিনামা লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারে। আমাদের দেশে সরকারীভাবে মুসলিম পারিবারিক বৈবাহিক হিসাব সংরক্ষণের স্বার্থে কাবিননামার প্রবর্তন করা হয়েছে, যা শরী'আত পরিপন্থী নয়। তবে এর ব্যবহার পদ্ধতি সহীহ হতে হবে। আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী কাবিননামায় তাফবীযে তালাকের তিনটি পদ্ধতি হতে পারে।
১. বিবাহের পূর্বে কাবিননামা লেখানো। এ পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হলো, বিবাহের সাথে সমন্ধ করা। যেমন বলা ‘আমি অমুকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর কাবিননামায় প্রদত্ত কোনো শর্তের খেলাফ করলে, যে কোনো সময় সে নিজের উপর তালাক গ্রহণ করে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে পারবে।' যদি বিবাহের সাথে সম্বন্ধ না করা হয়, তাহলে উক্ত কাবিননামা কোনো কাজে আসবে না।
আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী রাহ. বলেন-
في تنوير الأبصار: وشرط الملك كقوله لمنكوحته إن ذهبت فأنت طالق، أو الإضافة إليه كإن نكحتك
فأنت طالق، فلغي قوله لأجنبية إن زرت زيدا فأنت طالق. إلخ
“তালাক সহীহ হওয়ার শর্ত হলো মালিকানা থাকা। যেমন স্বামী স্ত্রীকে বলা, যদি তুমি যাও তাহলে তুমি তালাক। অথবা বিবাহের সাথে সম্বন্ধ করা যেমন বলা আমি যদি তোমাকে বিবাহ করি তাহলে তুমি তালাক।”
অতএব যদি কোনো বেগানা মহিলাকে বিবাহের সাথে সম্বন্ধ না করে বলে, যদি যায়েদের সাথে দেখা করো- তাহলে তুমি তালাক। তাহলে উক্তিটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
২. বিবাহের সময় মুখে বলে দেয়া। তবে এক্ষেত্রে নিয়ম হলো- যদি বিবাহের প্রস্তাব প্রথমে মেয়ের পক্ষ থেকে হয় এবং বিবাহের জন্য তাফবীযের শর্ত দেয় আর স্বামী মেনে নেয়, তখন উল্লিখিত 'তাফবিযের' শর্ত পাওয়া গেলে স্ত্রীর নিজের উপর তালাক গ্রহণ করে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষমতা থাকবে। আর যদি স্বামীর পক্ষ থেকে প্রথমে প্রস্তাব হয় এবং মেয়েপক্ষ ‘তাফবীযে তালাকের’ শর্তের সাথে কবুল করে, তাহলে বিবাহ সঠিক হয়ে গেলেও শর্ত বাতিল বলে গণ্য হবে। তাই সেক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য তালাক গ্রহণের অধিকার থাকবে না।
আল্লামা শামী রাহ. বলেছেন-
(قوله: صح) مقيد بما إذا ابتدأت المرأة فقالت: زوجت نفسي ملك علي أن أمري بيدي أطلق نفسي
بيدها. الأمر كلما أريد، وعلى أني طالق، فقال الزوج قبلت، وأما لو بدأ الزوج لا تطلق. ولا يصير
“তালাক গ্রহণ করার ক্ষমতা স্ত্রীর কাছে থাকার শর্তে বিবাহ করলে তা সহীহ হয়ে যাবে।
(এটা সেক্ষেত্রে) যখন স্ত্রী প্রথমে বলবে 'আমি তোমার সাথে এ শর্তে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম যে, যখন ইচ্ছা আমি নিজের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারবো।' অতঃপর স্বামী বললো, আমি কবুল করলাম। তাহলে তালাকের ক্ষমতা অর্জিত হবে। আর যদি প্রথমে স্বামী বিবাহের প্রস্তাব দেয় আর স্ত্রী তালাক গ্রহণের শর্ত দিয়ে তা কবুল করে, তাহলে তালাকের ক্ষমতা অর্জিত হবে না।"
৩. বিবাহের পর কাবিননামা লেখানো। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতিতে গৃহীত শর্ত পাওয়া গেলে স্ত্রীর জন্য নিজের উপর তালাক গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে। উল্লেখ্য যে, স্ত্রী যদি বলে ‘আমি স্বামীকে তালাক দিলাম’ তাহলে তালাক সহীহ হবে না। বরং বৈবাহিক সম্পর্ক পূর্বের
ন্যায় বহাল থাকবে ৷
প্রচলিত কাবিননামায় স্বাক্ষরের শরয়ী বিধানঃ
উপরোক্ত আলোচনা অনুযায়ী প্রচলিত কাবিননামায় লিখিত শর্ত পাওয়া গেলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার ক্ষমতা রাখে। তবে শর্ত হলো, স্বামীর সে সকল শর্ত মেনে নিয়ে কাবিননামা পড়ে বা শুনে স্বাক্ষর করতে হবে। অনুরূপভাবে কাবিননামার শর্তগুলো মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করলেও তা প্রযোজ্য হয়ে যাবে, শর্তগুলো পড়ুক বা না পড়ুক। যদি স্বামী ‘কাবিননামা' পূরণ করার পূর্বেই স্বাক্ষর করে এবং কাজী সাহেব শর্তগুলো লিখে দেয়, তাহলেও স্বামী শর্ত মেনে নিয়েছে বলে সাব্যস্ত হবে। কেননা বর্তমান সমাজের প্রচলন অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্টারদের নিষেধ না করা হলে তারা ১৮নং ধারায় স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা দেয়ার কথা লিখে দিয়ে থাকে। তাই উক্ত সময়ে স্বামী নিষেধ না করে কাবিননামায় ঘরগুলো খালি রেখে দস্তখত করলে সাব্যস্ত হবে যে, সে প্রচলন অনুযায়ী তালাক গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করেছে। আল্লামা শামী রাহ. বলেন-
ولو قال للكاتب : اكتب طلاق امرأتي، كان إقرارا بالطلاق، وإن لم يكتب؛ ولو استكتب من آخر كتابا
بطلاقها، أو قرأه على الزوج، فأخذه الزوج، وختمه وعنونه، وبعث به إليها، فأتاها، وقع إن أقر الزوج أنه
“আর যদি স্বামী লেখককে বলে তুমি আমার স্ত্রী তালাক' কথাটি লেখো, তা তালাকের স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে। যদিও সে নিজে তালাকনামা না লিখে। আর যদি লেখকের মাধ্যমে তার স্ত্রীর তালাকনামা লেখায় বা তালাকনামা লেখার পর স্বামীর সামনে পড়ে এবং সে তা গ্রহণান্তে সিল-স্বাক্ষর করত তাতে ঠিকানা লিখে স্ত্রীর কাছে পাঠায় তাহলে তা স্ত্রীরনিকটে পৌঁছামাত্র সে তালাকপ্রাপ্তা বলে গণ্য হবে, যদি স্বামী উক্ত তালাকনামাকে তার পক্ষ থেকে প্রেরিত বলে স্বীকার করে।”
কোর্ট থেকে তালাক গ্রহণঃ
আমাদের দেশে কোর্ট অথবা কাজী অফিসে গিয়ে তালাকনামার সরকারী ফরম পূরণের
মাধ্যমে স্ত্রীর স্বামী থেকে তালাক গ্রহণের অর্থাৎ স্ত্রী নিজের প্রতি তালাক দেয়ার নিয়ম
প্রচলিত আছে। এক্ষেত্রে বিধান হলো, কাবিননামায় তাফবীযে তালাকের ১৮নং ঘরে যে সমস্ত শর্ত লেখা থাকে যদি সেগুলো পাওয়া যায়, তাহলে স্ত্রী কোর্টের মাধ্যমে (বা কোর্টের মাধ্যম ছাড়াই) তালাক গ্রহণ করে ইদ্দত পালন শেষে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, কোর্ট থেকে তালাক গ্রহণের সময় বলতে হবে ‘আমি স্বামী প্রদত্ত ক্ষমতা বলে নিজের উপর শর্ত মোতাবেক তালাক গ্রহণ করলাম'।
পক্ষান্তরে যদি বলে 'আমি স্বামীকে তালাক দিলাম' তাহলে তালাক গ্রহণ সহীহ হবে না।
তবে ‘তাফবীযে তালাকের' ঘরে উল্লিখিত শর্ত স্বামী কর্তৃক খেলাফ না হলে কোর্ট থেকে তালাক গ্রহণ করা সহীহ হবে না। বরং সে প্রথম স্বামীর স্ত্রী হিসেবেই গণ্য হবে। তাই দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম হবে।
ডিভোর্স কি?
Divorce এর আভিধানিক অর্থ বিবাহ বিচ্ছেদ। আদালতের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর ইচ্ছাক্রমে অথবা স্বামীর তালাকের মাধ্যমে বা যে প্রকারেই বিবাহ বিচ্ছেদ হওক না কেন, তাকে Divorce বলা হয়।
অর্থাৎ তালাক শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ হলো Divorce (ডিভোর্স)। শরী'আতে তালাকের
ন্যায় ডিভোর্স প্রদানের ক্ষমতা দিয়েছে একমাত্র স্বামীকে, স্ত্রীকে নয়। তাই স্ত্রী স্বামীকে তালাক বা ডিভোর্স দিতে পারে না। সুতরাং যদি স্ত্রী স্বামীকে তালাক বা ডিভোর্স দেয়, তাহলে সেই তালাক বা ডিভোর্স কার্যকর হবে না; বরং পূর্বের ন্যায় তাদের বিবাহ বহাল থাকবে । হ্যাঁ, যদি স্বামী শর্তের সাথে বা শর্তহীনভাবে স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা অর্পণ করে, সেক্ষেত্রে সে নিজের নফসের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারবে। তাকে এভাবে বলতে হবে যে, আমি আমার স্বামীর প্রদত্ত 'তাফবীযে তালাকের' (স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা অর্পণ) ক্ষমতাবলে নিজ পক্ষান্তরে নফসের উপর তালাক বা ডিভোর্স গ্রহণ করলাম। যদি বলে, আমার স্বামীকে তালাক বা ডিভোর্স দিলাম, তাহলে তালাক হবে না।
ফতোয়া সত্যায়নেঃ
মুফতি নূর আহমদ হাফিজাহুল্লাহ
প্রধান মুফতি ও বিশিষ্ট মুহাদ্দিস
দারুল উলুম হাটহাজারী চট্টগ্রাম ৷
মুফতি জসিম উদ্দীন হাফিজাহুল্লাহ
মুফতি ও মুাদ্দিস দারুল উলুম হাটহাজারী চট্টগ্রাম ৷
০৮ই জুমাদাল উলা ১৪৩৫ হিজরী৷
মুফতি ফরিদুল হক হাফিজাহুল্লাহ
মুফতি ও উস্তাজ দারুল উলুম হাটহাজারী চট্টগ্রাম ৷
০৬ই রজব ১৪৩৫ হিজরী ৷